এই ব্লগটি সন্ধান করুন

দেবাঞ্জন ব্যানার্জি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দেবাঞ্জন ব্যানার্জি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩

দেবাঞ্জন ব্যানার্জি এর এক গুচ্ছ কবিতা

 




ফিরে দেখা

                     


আমার স্বপ্নে তুমি আজও আমার পাশে,

তবু হাজার ডাকেও নেই যে কোনো সাড়া!

      ব্যর্থ কবির স্তব্ধ অভিলাষে,

তুমি মাঝ আকাশের ভিনদেশী এক তারা ।


রংমহলের দরজা আজও খোলা

আজও ফেরায় আলো ঝলমলে ঝাড়বাতি..

আজও তুমি ছাড়া হইনা আপনভোলা,

হয়তো ভাগ্যে আমার চলছে সাড়েসাতি।।


বাঁচিয়ে তুলি ধুলোজমা ক্যানভাস,

শুকনো রঙে স্মৃতির কণা ঝড়ে

তোমার ছবিতে পড়ছে রুদ্ধশ্বাস,

ওই হাসিতেই একরাশ মেঘ সরে।


আজ আলোয় মোড়া পথে আমি একা,

ওই ছুট্টে এসে হাতটা ধরলে তুমি,

আবার তোমার আমার প্রথম সেই দেখা..

সেই চলে যাবে তুমি, কালই তো দশমী।


চশমা 


আলমারির এককোনে ফেলে রাখা চশমায় চেপে বসা ধূলো..

যেনো থাকতে চায় না আর, উগড়ে দিতে চায় জমানো কথাগুলো।

তুলে নিয়ে দেখি তাতে, একপলকের আদরে,

হাজার রঙিন বিকেল আর বেরঙিন প্রজাপতি ওড়ে।

ছুট্টে দেখি বারান্দায়, সরছে ঐ গম্ভীর মেঘগুলো,

ইচ্ছে হয় আমারও, সায় দেয় ঝরাপাতাগুলোও।

মরা গাছেও দেখি ফোটে ফুল, তবু বাতাসের হাহাকার!মিছিমিছি কেন? কেন আজও ওরা নির্বিকার? 

ইচ্ছেনদীর তীরে, আজও থমকে আমি অকারণ

বেরঙিন দুনিয়ায় রঙিন বেলুন ফেরি করাই বারণ ।



না বলা কথা


আমার স্বপ্নগুলো দমকা হওয়ার মতো,

মাঝে মাঝে এসে ঝরাপাতাগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যায়,

ঠিক যেনো আকাশের ঐ বিদ্যুৎের ঝলকানি, এক পলকে এসেই আবার কোথায় পালায়!

বসে বসে ভাবে শুধু আমার মন,

এগুলো বলাই নিষ্প্রয়োজন,

আমার না বলা কথা।

এলো ওরা হনহনিয়ে তেড়ে

বাঁধলো আমার হাত, পা, আমার মুখ,

খাঁচায় বন্দি বাঘের চেয়েও যে হিংস্র,

কেড়ে নিলো আমার বাঁচিয়ে রাখা সুখ।

মাটিতে পড়ে রয়েছি শুধু আমি

সইছি ওদের দেওয়া সব যন্ত্রনা

খাচ্ছে ছিঁড়ে ক্ষুধার্ত সব পশু,

নিজেকে তো আর বাঁচাতে পারলাম না!

থাকলাম না আমি, থাকলো না আমার স্বপ্ন,

জিতলো ওদের নগ্ন বীভৎসতা,

বীরদর্পে থাকলো শুধু ওরা,

আর রইলো বেঁচে আমার না বলা কথা।

যখন লড়ছিলাম ঐ পশুগুলোর সঙ্গে

কেউ শোনেনিতো আমার অসহায় চিৎকার,

আর আজ যখন আমি দূরে, অনেক দূরে

সেই তোমরাই কিনা দিচ্ছ আমায় ধিক্কার!

আমিতো সাধারণ একজন

তাই নির্বিচারে যন্ত্রণা নিয়ে যাই,

আজ আমি আর নেই, পুড়লো আমার দেহ,

বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেলো সব ছাই।

এমনি করেই যাচ্ছে চলে সব,

হচ্ছে যতো হিংস্র পশুর শিকার,

আমার তো আজ হাত, পা সব বাঁধা,

তবে তোমরা কেনো এখনও নির্বিকার?

বলছো তোমরা ভুল তো কিছুই নয়,

মেয়েরা কেনো করবে বাচালতা?

জানতাম সব বুঝবে না তো কেউ,

আমাদের সব না বলা কথা।

                


নবাগত


আসিয়াছে দেখো নূতন কুসুম

আনিয়াছে বর্তমানের সুঘ্রাণ

তারে ঝরাইলে পড়ে হারাইবে তুমি, 

ভবিষ্যতের প্রাণ।

সুকঠিন তার সবুজবৃন্ত,

চিরমুক্ত যে দল।

তাহারই মাঝে উজ্জ্বল তেজ,

কোথা আর পাবি বল?

কোমল যে তার দলগুচ্ছ,

মধুর বর্নে রিক্ত,

বিধুর জ্যোৎস্নাস্পর্শে লজ্জায় গুটায়,

হয় শীতল শিশিরে সিক্ত।

সঙ্গীরা সব পাপড়ি মেলিছে

ডাকিতেছে তারে যারা,

প্রভাতরবির আলোর ডাকে

ধীরে ধীরে দেয় সারা।

ধীরে ধীরে দেখো বহিতেছে বায়ু

মাথা দুলায় পত্ররাশি,

হেলাও তোমার ক্ষুদ্র দেহ,

দূরে ঐ রাখাল বাজায় বাঁশি।


চতুস্পার্শ করো সুন্দর,

হও আনন্দে তমোঘ্ন,

বরন করো হে নবাগতকে,

দেখো আগামীর স্বপ্ন।


স্রোতের চোরাস্মৃতি


আজ মুক্ত স্রোতের উজানটানে সব স্মৃতি ভেসে যায়, তবুও কেনো ঢেউগুলো সব চড়ায় ধাক্কা খায়?

পাথর ভর্তি পাড়গুলো আজ নয় আর পঙ্কিল, আকাশের বুক চিড়ে ওড়ে একলা শঙ্খচিল।

নেইতো জোয়ার, শোনা যায় শুধু ভাটার দুঃখের গান, বাণের জলের কান্নায় তাই ভাসে নদীর প্রাণ!

গানদরিয়ায় একলা মাঝি ভাসছে মনের সুখে, ঢেউয়ের বওয়া চোরাবালি জমছে নদীর বুকে।

দিগন্তের শিখরে রামধনু সুতো বাঁধতো নদীর প্রাণ, এখন শুধু জ্বলতে থাকা চিতার পাশে একলা ফকিরের গান।

মুক্ত থাকার জ্বালায় রইলো বন্দি থাকার আশা, দুরন্ত স্রোতের মাঝে আজ শুধুই স্মৃতির যাওয়া আসা।