(প্রথম অধ্যায় )
প্রথম পর্ব
নীহারিকা তোমায়
এক
"I love you "
কথাটা খুব ছোট্ট না ? আচ্ছা ভালোবাসাটা কি ওতো সহজ ?
এমনি এমনি কি ভালো বাসা হয় .... চাইলেই ?
একটা space চাই .... খোলা উৎমুক্ত একটা আকাশ ,খাঁচার পাখি মেলবে ডানা ,অবাধ ঢেউ আছড়ে পড়বে তীরে ... হিমালয় বেঁয়ে গঙ্গোত্রী নামবে ,সবুজ ফসলে ভরে যাবে মনের প্রান্তর ।
কই সেই সেই যায়গা ... "নীহারিকা " যাও তোমার নাম নীহারিকা দিলাম ।
উল্কা পাত না হয় হলো ... না হয় আমার পৃথ্বীর বুকে ক্ষত চিহ্নে প্রেম আঁকা হলো .... তাতে ক্ষতি নেই কোনো ॥
ভালোবাসা শব্দটা সত্যি সহজ , সরল , বলো ?
হয়তো সহজ ,সরল রেখা একটা ... বক্ররেখা হয়ে বৃত্ত বানায় তারপর কেন্দ্রে থাকে হিসাব ... কে কতোটা আকাশ পেল ,কে কতো টা মাটি ? চাওয়া পাওয়া এন্টি log এ ... সমাকলন সাজায় শূন্য থেকে ইনফিনিটি... ॥
তবুও প্রেমে পরে ,প্রেম হয়... ভালো বাসে ... ঘর সাজায় ,স্বপ্ন সাজায় মনের ব্যালকনিতে গল্প হয় কথা ... ।
আচ্ছা নীহারিকা তুমি বলো কোন দিকে যাবো আমি ... বাম অলিন্দে না ডান অলিন্দে ... কোন সেই পথ ? যে পথ এভারেস্ট এর গায়ে লিখে বেনামী চিঠি ... রক্তে চাপ বাড়ে , কিছু ... বারুদ আছে কি বলো তাতে ... আগুন ?
হৃদয় জ্বলবে ... ভালোবাসা কি পাবে ধর্ষিত মন ... ॥
( দুই)
" তুই কি পাগল হলি নাকি ? কি সব বলছিস ? কিছুই তো বুঝতে পারছি না ,সত্যি তোর মাথা গেছে ডাক্তার দেখা গিয়ে ... ।
ঠিক বলেছো নীহারিকা মাথা গেছে হয়তো আমার ,হয়তো আমি আমি এই পৃথিবীর কেউ নই ,এই বদ্ধ খাঁচায় আমার জায়গা হবে কি ? আমি তো উড়তে চেয়েছি ,ভালো বাসতে... কাছে আসতে ,শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যেমন বাক্য হয় আর তাতে দিয়ে কবিতা ... সমুদ্র ... পাহাড় ,নীল আকাশ
মেঘ ,বৃষ্টি ... হ্যাঁ আমি বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি আরও আমার শরীরে প্রতিটি লোম কূপ জানবে তার ছোঁয়া ,সুড়সুড়ি দেবে ,আর আমার লোম খিল খিল করে হেসে উঠবে ... ।
"বুঝলাম না কিছু ,যা তো আমার অনেক কাজ আছে ,তোর ভাট বোকা এবার একটু থামা please । কাল আবার অ্যাসাইমেন্ট জমা দিতে হবে ,তোর তো সব কমপ্লিট তাই না রে ? "
" জানি তুই বুঝবি না আমার কথা ,আমার নামের সামনে যে কবি শব্দটা যুক্ত হয়ে গেছে ,কবিরা কখনো সহজ কথা কঠিন করে বলে ,আবার কখন কঠিন কথা সহজ করে বলে যে ,আমি সহজ কথা গুলো না হয় কঠিন করে বললাম। এই কবি শব্দটা যে কতো ওজন আগে জানতাম না ,জানলে কোনো দিন কবিতা লিখতাম না ... আসলে কি জানিস আমি হয়তো লিখছি না কবিতা গুলো ,মনের মধ্যে যখন কথা জমে ,প্রশ্ন জন্মায় ,উত্তর মেলে না বেশির ভাগ সময় ... ঠিক তখনি ভূমিকম্প হয় ,ঝড় উঠে ,ডিপ্রেষণ ,শব্দ মালা বলে ভাষা দাও ,থেটিস থেকে হিমালয় জেগে উঠে তখন ,কেউ যেন লিখিয়ে নেয় কথা ,আর আমি লিখতে থাকি । আসলে যে আমি মনের কথা সবার মতো সহজ করে বলতে পরি না ,তাই কবিতা হয়ে যায় কথা ... ॥ "
"আমি যে বললাম অ্যাসাইমেন্ট লেখা হয়েছে ? "
রোজ তো লিখছি আমি ,জীবন নিয়ে ,ব্যর্থতা নিয়ে
'আরে পাগলা seminer আছে যে ,তার ?'
"নাহ !"
আমি বলেছি না আমি এই পৃথিবী বন্দী খাঁচায় ,একটা মুক্ত আকাশ চাই ,একটা স্পেস কথা বলার ? কই সে জায়গা ? আমি তারই খোঁজ করি শুধু “
(তিন)
"হলো তোর ভাট বোকা ,আমাকে বিরিয়ানী খাওয়াবি কবে বল ? "
"খাওয়াবো তবে শর্ত আছে "
"কি শর্ত শুনি"
"কিছুই না শুধু তুই আমার পাশে বসে আমার সামনে খেতে হবে ,আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবো শুধু ,আর নিজের পৃথিবীটা খুঁজবো "
"যা তো এখান থেকে ,তোর গলা টিপবো আমি ,আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার লোক আছে ,আর তোর তো আছে ডেকে নে ওকে ,ও জানলে কিন্তু... "
"জানবে জানবে কি হবে ,break up ,তা তো রোজ হয় ,আবার ঠিক হয় ,"
"বাহবা !এতো প্রেম ? "
"হম্ম ! এতো টাই ,তবে সেই জায়গাটা নেই ... একটা মুক্ত আকাশ ,একটা প্রান্তর ,একটা সমুদ্র নেই ... একটা ছক কাটা সাদা কাগজে আটকে গেছে কথা গুলো ,ভালো লাগা গুলো কিন্তু গোলাপ ফোটায় ,ভালোবাসাও আছে একটু টুকরো বরফ নীল কাঁচের গ্লাসে ভাসছে ,টাইটানিক কিন্তু এখনো ডুবে যায়নি ... অন্তরীপ খুঁজছে ... একটা প্রবাল প্রাচীর ডিঙিয়ে ॥ "
"কি যে বলিস কিছুই বুঝি না !"
"বুঝবি না ... আচ্ছা কবিরা কি সত্যিই পাগল ? সত্যি কি আবোল তাবোল বকে ? যুক্তিহীন ... নাকি আবেগে ? শুনেছি কবিরা প্রেমিক হয় ? তবে আমি কি কবি নই ? নাকি প্রেমিক নই ? ... তবে কেন চশমা খুললেই দেখি বদ্ধ খাঁচায় ইঁদুর দৌড় ... হারিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসা রোজ ,চারিদিকে শুধু যন্ত্রনা ,কান্না আর ধ্বংসের প্রতিচ্ছবি ... তার মাঝেই শুকনো গোলাপের পাপড়িতে ইতিহাস লিখছি ..... । আর হৃদয়টা জমে হিমালয় । তবে এই নয় যে ভালোবাসতে জানি না ... ভালো তো রোজ বাসি তাকে ,রোজ প্রেমে পড়ি ,তার চোখে পৃথিবী আঁকি ... কিন্তু মুক্ত আকাশ পাই না । "
"তোর মাথা সত্যি গেছে ... । চল কাল viva আছে, পড় গিয়ে ,আমার কিছুই পড়া হয়নি ,আমাকে পড়তে হবে ,বাই টাটা "
"টাটা "
##
হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো প্রিয়মের ।
১১ .৩০ এই যা !অফিসে যেতে হবে তো । আজও লেট । কালকে পেটে পড়েছিলো তো ঘুমের সঙ্গে ,স্বপ্নটাও বেশ জমে উঠেছিলো ... ।
একি একটা অতি চেনা অথচ পুরোনো একটা নাম্বার ,দুটো misscall ।
লাস্ট কত বছর আগে কথা হয়ে ছিলো মনে নেই হবে পাঁচ-ছয় বছর ,তারপর ইতিহাস ,কতো চেনা এই নাম্বারটা ... অথচ আজ পুরোনো অনেক ,তবে হঠাৎ কি মনে করে বেঁচে আছি না নেই সেইটাই জানতে কি ,তবে ?
নাকি ..... ।
চার )
"ফের বলবে কি রে তোর প্রেম কেমন চলছে ,কেমন আছে অনামিকা ,আর শ্রেয়সী এর খবর কি ,ফোন করে ? "
আর আমার সেই এক উত্তর ..." সব ভালো আছে ,শুধু পৃথিবীতে আকাশটা নেই উড়ার মতো "
" তুই না ... সত্যিই ,দেখ ভালো বাসা ও ভাবে হয় না ,যে কোনো এক জন কে ভালো বাসতে হয় , ও ভাবে কোনো সম্পর্ক টিকে না । তুই ডিসাই কর কাকে তুই চাস ? শ্রেয়সী নাকি অনামিকা ? শ্রেয়সী তো চলে গিয়েছিলো তোকে ছেড়ে। এখন তোর নাম হয়েছে ,অনেক পরিচিতি । আর এসে সে এসে আবার চলে যাবে না তার কোনো গ্যারান্টি কি আছে । আর অনামিকা খুব ভালো মেয়ে ,তোকে ভালো বাসে খুব । দেখ তুই কি করবি ? "
"আমি একটা নিজেস্ব পৃথিবী চাই,একটা নিজেস্ব আকাশ ,উড়বো বলে ... । "
আজ একটা ছোট্ট মেডিকিন কোম্পানীতে চাকরি করে প্রিয়ম । হঠাৎ নীহারিকার নক্ষত্র পতন হবে কে জানত ? হঠাৎ ৬ বছর পর কি মনে করে ?
নাহ ,ফোন করেনি ঘুরে তাকে ।
একটা নিজেস্ব পৃথিবী চেয়েছিলাম ,পাইনি ,আবার সেই এক ঘেয়েমী জীবন ,অফিস ,বাড়ি ... ট্রাম বাসে পিসে যাওয়া জীবন । নাহ আর কবিতা পায় না ,না আর জোর জবরদস্তি করে লিখে না কবিতার আজ মৃত অনুভূতির সাথে সাথে । আজ শুধু রক্ত উঠে মুখে কথার পাহাড় হিমালয় হয় ,বরফ জমে ,গঙ্গোত্রী ... ভাসিয়ে নিয়ে যায় বুক রোজ ,বৃষ্টি কিন্তু হয় না আর ,মেঘ জমে ,জমাট কালো মেঘের আড়ালে নীহারিকা ,বা শ্রেয়সী বা অনামিকা এক একটা বিদ্যুৎ এর ঝলকানিতে হারিয়ে যায় মুখ ... । আর আমি নৌকা বানাই ফের ,আবার বেনামী চিঠি ... আর গোলাপ সিগন্যাল ……।
(পাঁচ )
আজ একটা সত্যি কথা বলবো তোমায় । নীহারিকা ... ও নীহারিকা ? শুনতে পাচ্ছো কি ? হয়তো না। তুমি তো অন্য পৃথিবীর মানুষ এখন । আমি ভিন দেশী তারা । তোমায় আমি ভালো হয়তো বাসি না ,প্রিয় বন্ধু যে তুমি ,সেই যে প্রেম বলে লোকে ন্যাকু ন্যাকু কথা ,এসবের উর্দ্ধে তোমার অবস্থান । এভারেস্টের চূড়ায় টাইটানিক পোজ তোমাতে মানায় ॥ খাঁচার পাখি আকাশ পায় ,কথা গুলো ভাষা পায় । অথচ সত্যি বলছি তোমায় ভালো বাসি না আমি ,সেই ক্ষমতা হয়তো আমার নেই । তবে তোমার চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়তো বারণ নেই ,তোমার শরীরের গন্ধটা গোলাপের গন্ধকে হার মানায় । তাই রহস্য আমার কাছে তোমার শরীর ,তোমার মন ,তোমার সব কিছুতেই ॥ তোমার ঘামের গন্ধে পারফিউম হতেও ইচ্ছে করে আমার । তোমার হৃদয়ে মাথা রেখে ইচ্ছে করে তোমার পাহাড়ে হেঁটে বেড়াই । তোমার নাভি পদ্মে হয়ে ফুটতে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে ,নদীতে সাঁতার কাটি
আমার ঘাম বৃষ্টি হয়ে যায় ... রহস্য সমাধান হয় না । দূর্বা ঘাসের সুড়সুড়িতে খিলখিল করে উঠা শরীরের বিষাক্ত লাভায় .... শেষ চিঠি লেখা । নীহারিকা তুমি থেকো ভালো আকাশে ,তুমি বলতে না মেঘ সরিয়ে সূর্য উঠবে
উঠছে ... ঘন গাঢ় লাল রঙ্গা একটা সূর্য আমার আকাশের বুকে ,রাতের তারারা সেই সূর্যের আড়ালে হারিয়ে যাবে একদিন ॥
রহস্য তবুও থেকে যাবে হয়তো .... । ।
(ছয়)
“একটা ফ্লায়িং কিসস ……”
“যা তো ঘুমো ,ওটা তোকে অনামিকা দেবে । ওকে বল”
“ওকে বললেও দেবে ,না বললেও দেবে ,আমি যে তোর কাছে চাইছি ,ফ্লায়িং not রিয়াল”
“আমার দেওয়ার লোক আছে ,বুঝলি”
“তাই ! তো ? একটু extrarnal এনার্জি , you know na, to start a reaction need a minimum energy ,i.e the activation energy ,I just nee the activation energy from you baby”
“ থাপ্পড় খাবি কিন্তু ,চল হট ,ঘুমো তুই ,বুঝছি আজ পেটে পড়েছে ,দাড়া বলছি অনামিকাকে”
“ওয়ান থাপ্পড় = 100 চুমু”
“ তুই না বড্ড পাঁজি হয়ে গেছিস আগের থেকে”
“তাই ? সময় বদলে দিয়েছে বুঝলি , সময় সব বদলে দেয়”
“হমম ,না বদলে গিয়েই তো ভালো ছিলি ,আজকাল তো তোর দেখাই পাওয়া যায় না ,কথাও তো বলিস না আজ কাল ,আজ আট দিন পর মনে পড়লো আমাকে ?”
“আসলে কি জানিস মনে তো সব সময় পরে ,মাথার মধ্যে গিজ গিজ করে ,শব্দের কোড গুলো sometimes it gives 0 or 1 ,when it's 0 then I think it's not right but when it's 1 it Will be right or may be able to make it right”
“পাগল একটা! অনামিকার খবর কি”
“অনামিকার খবর কেন ? আমার খবর নয় কেন ?”
“ না….ও ভালো থাকলেই তো তুই ভালো থাকবি ?”
“ ওহঃ তাই ? আগে জানতাম না তো, এই প্রথম জানালাম”
“জেনে রাখা তবে …”
“জ্বলন হচ্ছে তোর ? নাঃ ….ভাবছিস যে …”
“ আচ্ছা তো ,কেন জ্বলন হবে ? বরং এইটাই ভালো লাগছে যে তুই at লাস্ট একটা প্রেম করছিস …”
“তাই ! এত সহজে বলে দিলি তুই কথা গুলো ,এতো তা সহজ ভাবে , I am very proud of you ,that you can bear it ,”
“ যেটা সত্যি তাই বলছি……,যা ঘুমো ,আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম ,good নাইট …...টেক কেয়ার”
“হ্যালো ….,হ্যালো ….”
নো রিপ্লাই ,জানালা খুলে প্রিয়ম দেখলো ,বাইরে সারি সারি ল্যাম্পপোস্ট ,নির্জন একটা চলমান গলির রাস্তায় ….শুধুই শব্দহীন শব্দে ভেঙে পড়ছে এক একটা ইট পাথরের ঘর বাড়ি ,মিশে যাচ্ছে তারপর ধুলোয় । নাঃ ঘুম নেই ,লাস্ট কবে ঘুমিয়েছে সে মনে নেই ।
ডাইরিটা রেখে দিল টেবিলের এক কোনে ,ঈপ্সিতা । ছাদে গিয়েই দেখে মাথার উপর চাঁদ মুচকি হেসে মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে । দু একটা তারাও দেখা যাচ্ছে মাঝে মাঝে ,কাল হয়তো বৃষ্টি হবে না , আজ তিন ধরে শুধু বৃষ্টি হচ্ছে মসুল ধারে ,ওদিকে বাবা তিন ধরে কোমায় , শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে ,চোখের দিকে তাকালেই মনে হয় কিছু একটা বলবে ….কিন্তু বলতে পারে না ,আর কাকে যেন খোঁজে ,দেখতে না পেয়ে আবার চোখ বন্ধ করে দেয় ,আবার হঠাৎ জেগে জেগে ওঠে শুধু ।
কাল বৃষ্টি না হলে অফিসে যাবে একবার ঈপ্সিতা ,অনেক দিন যায়নি বাবার শরীর খারাপ বলে ….।।
(৭)
আজ বৃষ্টি নেই । আকাশ পরিষ্কার ,ঝক ঝকে একটা সূর্য উঠেছে আকাশে । তবে রাস্তায় কিন্তু জল জমে আছে অনেক । জল কাঁদা পেরিয়ে ঈপ্সিতা ,কাপড় বাঁচিয়ে চলছে মেইন রাস্তায় । তারপর বাস ধরে অফিস । অফিসে এসে দেখে আজ রিতম আসেনি । অনেক কথা বলা ছিল ওকে । ওহঃ তো রোজ দেরি করেই আসে । আজ হয়তো আসবে দেরি করে ।
নাহ আসেনি আজ রিতম । সন্ধ্যায় ,হসপিটালে গেল বাবাকে দেখতে । নাঃ কোনো উন্নতি নেই । সেই এক ,কাকে যেন খুঁজে চলেছে এখনো ,খুঁজে না পেয়ে ,একটা হতাশার ছাপ যেন চোখে । আর কত প্রতীক্ষা ? আর কত ….?
বাড়ি এসেই আবার ডাইরী খুলে বসলো ঈপ্সিতা ।
মেঘ করেছে এবার ,আকাশে ,ঘন কালো মেঘ ….আর বাতাস ।
“ পড়েছিস আজকের লেখাটা ? কথা গুলো চেনা চেনা লাগছে না ? “
“এই অপুটাকে রে”
“একটা ছেলে ,দীপশিখা এর বাবা”
“ পুরো লেখাটি পড়বি ,অনেক কথা হয়তো চেনা লাগবে তোর”
“দে”
“পাঠিয়েছি দেখ ইমেইল এ”
হঠাৎ ফোন বেঁজে উঠলো ঈপ্সিতার , “হ্যালো !”
ওপর দিক থেকে একটা অতি চেনা ,অথচ পুরোনো একটা গলা , চোখ বুঝেই ঈপ্সিতা
বলল “কি মনে করে আজ ? ,এত দিন কোথায় ছিলে”
অপর দিকে থেকে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ,একটা শব্দহীন শব্দে যেন বিস্ফোরণ হওয়ার আওয়াজ ।
“একি কাঁদছো কেন ? কি হয়েছে ,তুমি যে বলেছিলে ,তোমার হৃদয়ে আমাদের জন্য পাথর হয়ে গেছে …”
ফোনটা কেটে গেল । ঈপ্সিতা ফোন করলো ,কিন্তু উত্তর আর এলো না । নিঃস্তব্ধ হয়ে ঈপ্সিতা তখন বাবার ও মায়ের তোলা আজ থেকে কুড়ি বছর আগের তোলা ছবিতে হাত বোলাতে লাগলো ।তখন ঈপ্সিতা পাঁচ । আজ কত বড় সে ।
“আমার কথাই তো তুই লিখেছিস ,এগুলো ঠিক না কিন্তু”
“কি আর করবো ,এতো কিছু লিখছি ,তোর জন্য না হয় এটা লিখলাম ,এ ছাড়া তো কিছু দেওয়ার মতো আর কিছু নেই আমার তোকে”
“ইস আমি যদি পারতাম ,খুব ভালো হতো ,অনেকটা কথা জমে আছে রে ।”
“ লিখে ফেল ,ডাইরিতে ,নিজেই পড়বি ,নিজেই লিখবি ,আর পরে না হয় চিড়ে ফেলবি”
“ঠিক বলছিস ,তোর অনামিকার খবর বল ? ভালো তো সে?”দেখা করে আয় এক বার”
“কিছু কিছু জিনিসের ভার্চুলাটি থাকা জুরুরী ,রিয়ালিটির থেকে ,অস্তিত্বহীন এই ভার্চুয়ালিটিই সস্তার কিছু স্বপ্ন আঁকে রিয়ালিটিতে” বুঝলি”
“সেটা ঠিক ,তবে এসব ক্ষেত্রে কিন্তু রিয়ালিটিটা জুরুরী বুঝলি”
“হয়তো ,কিন্তু রিয়ালিটিতে এর সম্ভাবনা অন্য কিছু হয়ে যায় সব সময় ,তাই এবার একটু অন্য রকম ,যার বাস্তবতা নেই ,কিন্তু অস্তিত্ব আছে ।”
“তুই সত্যি …..পাগল একটা”
“আসলে কি জানিস ,আমি আর বাস্তবতাকে লিখি না ,এটা কঠিন ,রিয়াল এবং হিসাবের নিয়মানুবর্তীত , আর এতে চাওয়া পাওয়া নিয়ে প্রতি নিয়ত ,জমি দখলের লড়াই ,কে কতটা মাটি পেল ,কি কতটা ভিটে । তুই তো জানিস ,আমি এসব এখন আর পছন্দ করি না ,আমি চাই হয়তো ঠিকই কিন্তু পাওয়া ? নাঃ কোনো দিন ভাবি না আমি পাবো ,এখন অনেকটা পাথর দিয়ে তৈরি হয়ে গেছে প্রাচীর আমার ভিতরে ,আমি রোজ একটু একটু তাতে নিজেকে প্রস্তুত করি এক একটা সাইক্লোনের ,জানি সাইক্লোন আসবে ,হয়তো আমি ভেঙে পড়বো ফের ,তবুও নিজে স্বপ্ন দেখি বাঁচার ,না হলে যে কেউ আর আমার লেখা পড়বে না রে ,নীহারিকা। যাহঃ । আবার ডাকলাম তোমায় নীহারিকা বলে ,অন্তহীন একটা সুরেলা অনুভূতিতে সাজানো থাক আমার আকাশের এক কোণ ।”
“নীহারিকা ,ও নীহারিকা ….কোথায় তুমি ,তুই ….কৈ ,আজ আকাশে যে মেঘ করেছে ঘন কালো ,বৃষ্টি হবে ? দাও ...হতে দাও ,আরো বৃষ্টি আসুক ,আরো ,ভিজাক আমায় ,আমার সারা শরীরে শুধু নিঃস্তব্ধ দাবানল ,আমি ভিজতে চাই আজ ,আরো ,আরো একটু ভাসিয়ে দিতে চাই আমাকে ,বৃষ্টি কণা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাক লোমকূপ ,ঘাম মিশে যাক বন্যায় …অশ্রু হয়ে যাক সমুদ্র ,নাহ ,কৈ অশ্রু ….আমি কিন্তু আর কাঁদি না রে ,পারি না ? কাঁদলেও বৃষ্টি হয় না জানিস ,তাই তো গাঁ ভাসিয়ে দিয়েছি আজ ….ভিজবো বলে”
(৮)
“হ্যালো ! হ্যালো ....মিস রোয় বলছেন ? আপনার ডেড আপনাকে খুঁজছে ।জলদি আসুন”
সূর্যের আলো তখনও জানালার কাঁচ ছুঁয়ে যায়নি ।সবে নারকেল গাছের পাতার ফাঁকে উঁকি দিয়েছে। কাল রাত হয়ে গিয়েছিল ঘুমাতে ঈপ্সিতার ।আসলে রাতটাই যে প্রিয় ।ঘন গাঢ় অন্ধকারে আলো গুলো ফাঁকি দিতে পারে না কখনো ,দিনের মতো ।হসপিটালের বেডে বাবা আজ ছয় দিন । কালকেই তো একটু ভালো হয়েছিল আজ হঠাৎ আবার কি হোল । ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই হসপিটাল থেকে ফোন । না কোনো মতে ব্রাশট্রাস ,জামাকাপড় ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল সে । বাবা ছাড়া আর কেউ নেই যে তার । নাঃ ভুল বললাম ,শুনেছে তার মা আছে ,ভাই আছে ,পিসিমনি আছে কিন্তু কোথায় তারা ? সব আলোর নিচে কাঁপতে থাকা ছায়া ।
“ইসু ...ইসু ..মা আমার কোথায় ? মা দেখো ঝড় আসছে ,বিরাট বড় ঝড় সাইক্লোন” আঙুল নেড়ে প্রিয়ম বাইরে ওই যে জানালায় রোদ ছুঁয়ে গেছে ওদিকে আঙুল দিয়ে দিখিয়ে পাগলের মত বলে যাচ্ছে ,একটা আতঙ্ক যেন চোখে মুখে। মুখ শুকিয়ে গেছে যেন সব শেষ হয়ে গেছে ,সব শেষ হয়ে যাবে এমন ।
“না বাবু কিছু ঝড় আসবে না ,আমি তো আছি তোমার সাথে ,ওটা তো আলো ,তুমি তো ওই আলোকেই বেশি ভালোবাসো ,ওই আলোতেই যে মিশে যেতে চাও ।ওটা ঝড় নয় ,তুমি একটু ঘুমাও এখন সোনা বাবা আমার” সাত দিন পর এই প্রথম কথা বলল ,নাহলে শুধু দেওয়ালে কি যেন খুঁজে যায় ,কাকে যেন খুঁজে খুঁজে দেখে বার বার ,না পেলে আবার মুখ লুকিয়ে নেয় ফের ।ঈপ্সিতা আজ চোখে জল ধরে রাখতে পারছিল না ,তবুও বাবাকে শান্ত করেতে চোখ লুকাচ্ছিল বারবার ।এটা তো আনন্দের কান্না এর থেকে কত অশ্রু যে রোজ নিভৃতে ঝরে তার হিসাব কেউ রাখে না । আর এই নিথর পরে থাকা মানুষটার উপর দিয়ে যে কত নদী বয়ে গেছে ,সেটা শুধু সেই জানে । যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকে কত মিথ্যে বলে বলে নিজেকে সামলিয়েছে ,গোপনে কত অশ্রু ঝরছে ঈপ্সিতা ভালো করেই জানে । কত বার নিজে না খেয়ে খাইয়েছে হিসাব নেই ।। মা নেই তো কি হয়েছে ,তার বাবা আছে তো “সুপার হিরো” । আজ সে শয্যাগত ।।
(৯)
“ নিরাহিকা ….শুনতে পাও আমার কথা ? পাওনা জানি ,নাকি পেয়েও মুখ বুজে থাকো শুধু ,আমায় একটু অন্ধকার দেবে বলো , যেখানে তারা নেই ,যেখানে হারিয়ে গেলে কেউ খুঁজে পাবে না আর ,সব কি ভুলে থাকা যায় বলো ,সব কিছুই ,আমার শহরে দুর্ভিক্ষে মহামারী হয়েছিল সেই কবেই ,প্রেমহীন পৃথিবীতে এখন শুধু রক্তের দাগ কাটা দেওয়াল জুড়ে । জানি সব বুঝে চুপ থাকো কিংবা নাহলে কেন এতো টা আস্পর্ধা দেখাই রোজ তোমায় ছুঁয়ে দেখার ? হয়তো আমার মনেরই ভুল ।” আচ্ছা সময়টাকে যদি আটকে দেওয়া যেত কেমন হত ,জানো আজকাল এই সময়ের পিছু পিছু আমি যেন রোজ হারিয়ে যেতে বসেছি । এই সময়ের গতিবেগে আমি যেন নিস্তব্ধ স্থাবক । আগন্তুকের মতো দু একটা স্মৃতির বৃষ্টিপাতে আজকাল বড্ড মিশে যেতে ইচ্ছে করে মাটির গন্ধে ,জল কাঁদায় পা টিপে টিপে চলার মুহূর্তরা কম দামি গল্পের মতো হারিয়ে গেছে আমার বিজ্ঞাপনী কবিতার চোখে ।
বারবার ভুল করি, বারবার হেরে যেতে যেতে হেরে যাওয়াটা যেন এখন অভ্যেস হয়ে গেছে ডাল ভাতের মত ।ছেঁড়া কাঁথায় রাজত্ব করা পৃথিবীর মানচিত্রে আমার সূর্য খোঁয়া গেছে অভিমানের অক্ষাংশে । সেই তো বড্ড প্রেমিক আমিও ছিলাম একদিন ,আজ শুধু আগুনের রঙে ছবিতে আঁকি বুঁকি কাটি ।
হয়তো একদিন আমিও সিগারেটের মতো শেষ হয়ে যাবো ।ছাইয়ের দাম কি আর আছে বলো ।
নীহারিকা ! ওহঃ নীহারিকা তোমার বুকে ওই তারাদের ভিড়ে আমি কত খুজলাম তোমায় মতো একটা মুক্ত আকাশ কৈ পেলাম বলো ।তোমার ব্যাপ্তিকে কোনোদিন না মেনে নেওয়াটা হয়তো আজও বেঁচে থেকেও আমি মৃত । তুমিও অন্য আকাশে গল্প পাত অন্য কোনো স্বপ্নের বাস্তবতার । আমি হয়তো চাইলে তোমার গল্প হতে পারতাম ,কিন্তু আমার হারিয়ে যাওয়ার নেশা গুলো সত্যি দূর থেকে অনেক দূরে করে দিল আমাকে । ভালোবাসি না হয়তো তোমায় ,তবুও জানি এই পৃথিবীর সব চেয়ে আপন তুমি ,কাঁদতে পারি ,আবার হাসতেও ,আর আমার ভাট বোকা ,তোমায় জ্বালানো ইত্যাদি ইত্যাদি গুলো হয়তো একদিন মরেও যাবে ।”
আজকাল আবছায়া চলে যায় দূরে ,গৌধূলিতে দেখি মৃত্যুমুখী পরোয়ানা ,কংক্রিটে আটকে গেছে মন । রং মশালে আমি পুড়ছি রোজ ।।”
(১০)
"ভালোবাসি ? কৈ না তো ,তোকে একটুও ভালোবাসি না ,তবুও কেন ?
কি জানিস এই পৃথিবীতে সব থেকে প্রিয়মানুষকে হারিয়েছি অনেক আগেই ।তখন ল্যাম্পপোস্টময় আমিও ইন্তেজারীর ইস্তিহারে দেওয়াল লিখেছি অনেক। নাঃ সে ফেরেনি আর । তারপর থেকেই একটা মুক্ত আকাশ খুঁজি একটু উড়বো বলে । পাইনি রে । তবুও জানি তোর কাছেই আমি কাঁদতে পারি ,আবার হাসতেও ,তুই তো জানিস তোকেই সব থেকে বেশি জ্বালাই আমি ,ছ্যাবলামো করি । তবুও আমি কিন্তু তোকে ভালোবাসি না । শুধুই তোকেই আমার সব কথা বলতে পারে ,এমনি "মাকে" তো সব কথা বলা যায় না ,সে সব কথাও তোকেই বলি । আমার চার দেওয়ালে একটু ঘুরে দেখ তোর আচর কাঁটা দেওয়ালে ,বুকের উপর যে দু মুখো সাপের ছোবল তাতেও তোর কাছেই ধরা পরি বারবার । জানি তুইও অন্য পৃথিবীতে স্বপ্ন আঁকিস ,অন্য কোনো গল্পের নায়িকা তুইও ,এতে কষ্ট হয় না আমার ,দেখ !তোকে কিন্তু ভালোবাসি না আমি ,কিন্তু আমার আকাশের প্রতিটি তারায় তারায় তুই । দীপশিখা কিংবা প্রীতি, হমম স্বীকার করছি এদের মাঝে একটা আকাশ খুঁজে ছিলাম, পাইনি রে ,উড়ার মত । হয়তো ভালোবেসেছিলাম এদের কিন্তু সেই উড়বার জায়গা নেই । বদ্ধ ঘরে দম বন্ধ হয়ে যায় যে আমার ,তুই তো ভালো করেই জানিস ,তুই তো সব কিছুই জানিস আমার ,সব টা ,সেই ফাস্ট ইয়ার থেকে এক সঙ্গে ল্যাব ,ক্লাস ,এক্সাম ....হয়তো মাঝে মাঝে আমি ডুব মারতাম ,তুই কিন্তু ভুলিস নি ঠিক আগের মতোই আছিস । তবুও তোকে ভালোবাসি না আমি । এই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় যে তুই ,হ্যাঁ তুই । প্রেম-টেম নয় কিন্তু খুব কাছের কেউ । তুই যখন ব্যস্ত থাকিস তার ফোনে ,মাঝে মাঝে রাগ হয় ,অভিমান হয় ,তোর ইগ্নোররেন্স গুলো খুব বুকে লাগে ,তারপর ভাবি ...."ওহঃ নাঃ তোকে ভালোবাসি না আমি ।"
আর তো কয়েকটা দিন ,দুমাস পনেরো দিন তারপর তুইও আমার জীবন থেকে চলে যাবি ,আমিও চলে যাবো অজানা কোনো ঠিকানায় ।হয়তো আর কোনদিন কথাও হবে না তোর সাথে । কিন্তু আমি থাকবো কি রে বল ,কাকে জ্বালাবো? কার কাছে কাঁদবো ,মায়ের কাছে কাঁদলে সেও যে কেঁদে দেবে ,সেটা যে দেখতে আমি পারি না ,কাকে ডিস্টার্ব করবো বল ,রাত বিরাতে ফোন করে ? পাবো কি মুক্ত আকাশ একটা "নীহারিকা" নাম দিয়েছি তোর নীহারিকা । তুই বললি যে পেয়ে যাব ,কৈ পেলাম বল ,দীপশিখা আর প্রীতি ভেবেছিলাম পাবো এদের মাঝে ,পেলাম কৈ ? ফের আবার খুঁজবো ? নাঃ বড্ড ভয় হয় রে । কিন্তু তোকে ভালোবাসি না আমি । তুই হারিয়ে যাবি জানি ,এতে কষ্ট হবে না আমার ,কারণ তোকে ভালোবাসি না আমি ,আমার আকাশে সূর্য উঠবে না আর কোনদিন ,পাখি উড়বে না কোনোদিন । আর তারারাও হারাবে মেঘের আড়ালে । সেই "নীলাঞ্জনা" হারাবার পর তো আর চাঁদ উঠেনি এবার মেঘে ঢাকা আকাশে আমি কি করবো ,আমার পৃথিবীতে অক্সিজেন আর থাবেনা । জানিস মন খারাপ হলে তোকে ফোন করি ,আর তুই .....নাঃ রে ভালোবাসী না তোকে একটুও আমি ।
একবার ভাব ...তোকে ছাড়া আর কাউকে না বলতে পারা আমার কি হবে তুই হারালে ,তুই তো ভালো করেই চিনিস ,আমি হয়তো এত টুকুও চিনি না তোকে । কিন্তু তুই সব থেকে প্রিয় ...কিন্তু ভালোবাসি না কিন্তু তোকে একটুও আমি ।।”
কিসব বলছিস বলতো ,সব তো মাথার উপর দিয়ে গেল ।
“তুমি বাল বোঝো ,বাল ?”
“কি সব মুখের ভাষা ? এই জন্য কোনো মেয়ে পটে না তোর জন্য”
“আচ্ছা তাই ? আরে বাল ,বাল হলো একটা কমন কথা ,তাছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সামনে কিন্তু আমি একটুও খিস্তি মারিনা একদম ভদ্র ছেলে । ভিতর থেকে আসে না বুঝলি”
“আচ্ছা আমি কি দোষ করলাম তবে ?”
“দোষ তো অনেক করেছিস ,এই আমিকে ফেরাস নি কোনোদিন আবার রেখেও দিসনি”
“আচ্ছা তাই ,ওরম মনে হয়”
“ ভগবান আমাকে তুলে নাও উপরে ।”
(১১)
আজ বাবার শরীরটা বেশ ভালো আছে ,ঈপ্সিতা অফিস যায়নি দু দিন । আজ ফের অফিসের পথে । মেঘ করেছে আজও ,”ছাতা নিয়েছি , এই যা ছাতা নেওয়াই হয়নি”
বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে ,যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে কোনো মতে মাথা গুঁজে আছে ,অনেক ভিড় বাস গুলোতেও ।অফিস টাইম যে ।
“কিরে তুই এখানে ,আঙ্কেল কেমন আছে ?”
“মোটা মুটি ভালোই , আজ উন্নতি হয়েছে অনেকটা ,কাল হাসপিটাল থেকে ছাড়বে বলেছে ।”
“দু দিন ধরে ফোন করে যাচ্ছি ফোনে তো তোকেই পাচ্ছিই না ,বস তোর খোঁজ করছিল ।”
পরের সপ্তাহে মিটিং আছে ,আমাদের বস বদলি হচ্ছে জয়পুরে ,নতুন বস আসবে ,নতুন স্ট্র্যাটেজি বানাবে বলছে তাই” আমি তোর ডোকোমেন্টেশন গুলো কারেশন করে দিয়ে দিয়েছি ,তুই চার্ট ফাইলটি শুধু সাবমিট করে দিস “
“থ্যাংক ইউ, তুই এসব করতে গেলি কেন ? তোর তো কম পেসার নয় “
“নো থ্যাংক ইউ ,এটা আমার দ্বায়িত্ব,যাই হোক ,আমি এই রেনকোটটা দিচ্ছি ,এটা পর , আর বাইকে বস “
“না, আমি বাসে চলে যাবো”
“আর কত দিন লুকোবি বল , আজ আর না নয় , বুঝলি। কাল আঙ্কেলকে আনতে আমিও যাচ্ছি ,আর ফোনটা যেন অন থাকে”
অগ্যতা অভিকের বাইকে যেতেই হলো ,কারণ এরপর অফিস দেরি হয়ে যাবে ।
অফিস থেকে ফিরেই আজ বড্ড ক্লান্ত ,বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে ,সো আজ আর রান্না নয় । কোনো মতে জামা কাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়ল ঈপ্সিতা ।
হঠাৎ একটা ফোনে ঘুম ভেঙে গেল তার । অচেনা একটা নম্বর ।
“হ্যালো , কে বলছেন”
“আমি”
“আমি কে ?”
“মা”
“কার মা ,কোন মা ,আমার মা তো নেই ,আমার মা আমার কাছে মরে গেছে ,যে মা ছোট মেয়েকে ছেড়ে চলে যেতে পারে সে মা কি করে ? আপনি ভুল জায়গায় ফোন করেছেন”
“না ইসু ,না ...তুই ভুল ভাবিস না ,আমায় , জানি আমি অনেক বড় দোষী ,জানি । তোর বাবাকে দেখিস মা ,তুই যখন ছোট ছিলি তখন একবার এই রোগটা হয়েছিল , ভুলে যায় সব কিছু একটু খেয়াল রাখিস”
“ন্যাকামো হয়েছে ?আপনি আর এই নাম্বারে ফোন করবেন না”
ফোন কেটে দিল ঈপ্সিতা । হ্যাঁ বড্ড ভুলো মানুষ
প্রিয়ম । বাবার এই বড্ড ভুলে যাওয়া অনেক বার দেখেছে ।
কিন্তু মা কেন ছেড়ে গেছে এখনো জানে নি ,জানতেও চায় না । বাবাই তার সব ।।
ঘড়ি তে তখন একারোটা বাজে ,ঘুমটা ভেঙে গেছে । আর ঘুম আসছেনা । বাবার ঘরে গিয়ে আবার ডাইরিটা খুলেতেই ,একটা ছবি বেরোল ,পেন্সিল দিয়ে আঁকা ,বেশ পুরোনো । ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ,মুখটা ,ছবির নিচে লেখা শেষ পেন্সিলের টান ….।।
বাবা এত ভালো ছবি আঁকত জানত না ,আগে ..
কেন বন্ধ করলো ছবি আঁকা ?”
(১২)
"যেদিন থেকে তুই বলা শুরু করবি ,যে আমিও তোকে ভালোবাসি ,সেদিন বুঝবি আর তোর ধাঁরে কাছে নেই , সেদিন যেমন একটা ভালো বন্ধুকে হারাবি ,ঠিক তেমনি আমাকেও। "ভালোবাসি" শব্দটা তোর কাছে আমি শুনতে চাই না ,তবে হ্যাঁ আমি তোকে হাজার বার বলবো "আই লাভ ইউ , হাজার বার ফ্লাইং কিস দেবো ছুড়ে ,হাজার বার ইচ্ছে হবে জড়িয়ে ধরি ,গাল টিপি ,ঘারে হাত দিয়ে চলি ,হাতে হাত রাখি ,এতে আমার ব্যক্তি গত চাওয়া তোর কাছে ,তুই কিন্তু এসব চাইবি না ,চাইলেই হারাবি আমায় ,আর কোনোদিনই হয়তো তোর বাড়ির পথে পা রাখবো না তখন ।"
আসলে তোকে হারাতে চাইনা আমি ,
,জানি একদিন দুটি পথ দু দিকে চলে যাবে ,তুই অন্যের পৃথিবী সাজাবি ,অন্য আকাশে চাঁদ হয়ে থাকবি ,আমার ওসব কিছুই চাই না ,শুধু মরা চাঁদের আড়ালে শুকতারা হয়েই তোকে চাই ।
আমি রোজ সন্ধ্যা সকাল সেই তারার দিকে চেয়ে এক একটা ঘর বানাবো ...জানালা ....মন খারাপ হলে ওই জানালায় গিয়ে বসবি ,আমিও বসবো তারপর ...।।”
কিসব বলছিস ? সেটা ভাবিস না যে আমি কোনোদিন তোকে বলবো । এটা “ না” ধরেই রাখ বুঝলি ।
“হমম ,জানি তো , যদি বাই চান্স ….
“বাই চান্স এর কোনো অপশন নেই”
“আচ্ছা দেখবো”
হমম
(১৪)
“বাপরে আজকাল খুব ব্যস্ত মানুষ হয়ে গেছিস তুই ,তোর তো পাত্তাই পাওয়া যায় না”
এখন রিপ্লাই দিয়ে কি হবে ? না দিলেই তো পারতিস”
“আচ্ছা ,এবার বুঝতে পারলি ,যে কেউ রিপ্লাই না দিলে কেমন লাগে ? কেউ ফোন কেটে দিলে কেমন লাগে ? ঠিক আমারও এরকম মনে হয় বুঝলি ,মনে হত ।”
“বিশাল ঘ্যাম …”
“হাঁ হবেই …”
“ভালো ,কাল ভাইভা দিবি ,বল না রে ,আমি বাড়ি যাবো” চল না ভাইভা টা দিয়ে দি”
“আমার কিছুই লেখা হয়নি ,কাল দেবো না”
“বেশি লেখা নেই তো ,লিখে নে না বাবা ,একা ভাইভা দিতে ইচ্ছে করছে না’
কাল সকালে তোকে ফোন করেবো জলদি আসবি কিন্তু”
“দেখি ….”
নীহারিকার কথা আজ পর্যন্ত প্রিয়ম রাখেনি এমন হয়নি ,এই প্রথম বার সে তার কথা রাখেনি ,যায়নি কলেজ পরের দিন “অনেক বার ফোন করেছিল সে ,একবারও ফোন ধরেনি প্রিয়ম ।।
(১৫)
কিছু মিঠে রোদ্দুর দেবে ? গায়ে মাখবো আমি ।বিকেল বেলার প্রাসাদী আল্লাদের মতো বিস্কুট গুলো নুইয়ের পড়ুক নোংরা করা জলে ।।
কবিতা ভালোবেসে অনেকে হয়তো ভাবতেই পারে খুব কাছের মানুষ ।মনের কথা গুলো কেমন বলে দেয় অনায়াসে । আসলে এর বাইরে যে চোখের আড়ালে মরে যাওয়া প্রেম সে খোঁজ নিতে যায়নি কেউ ।।
হমম ,রোজ ভাবি আরো একবার খুব শক্ত করে একটা কষিয়ে চড় মেরে বলবে "ফাক ইউ" ।সব মিথ্যে ,সব মন গড়া । এত চুদুর বুদুর কেন তবে ওই মেয়ে গুলোর সঙ্গে ।। আমি নির্বাক চোখে জিভের ডগায় আঙুলে কামড় দিয়ে বলব "ও সব মন গড়া "।।
আসলে কেউ পারফেক্ট হয় না ,আমি অযথা ছককাটি "নিশ্চই এবার পাবো " দি পারফেক্ট লাভ "।তাই চুলকানি গুলো বেড়ে যায় ভালো করে জেনে নিতে গভীরতা ।।
কোনো অস্তিত্ব নেই তোমার বাস্তবে । হমম তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা যায় ,হাজার হাজার কবিতার স্রোতে কিংবা ড্রইং খাতা জুড়ে তোমার পায়ের ছাপ । মানে এই না তুমি উপন্যাস এর মহানায়িকা হয়ে গেছো ।।আগে গল্প হও ,তবেই এসো ।।”
-হমম বুঝলাম।
-কি বুঝলি ?
-ওই যা বললি ।
-তুমি বাল বুঝেছো ,
-তুমিই একটা বড়ো বাল
-ছি কি সব কথা
-আচ্ছা আমি বললে কি সব ,তুই যে মারিস খিস্তি
-ছেলেদের খিস্তিটা জন্ম গত অধিকার
-“বাল” ইসস তোর সাথে থেকে থেকে আমিও খিস্তি শিখে গেছি ,
-“এটাই পাওনা , যাক মনে থাকবে আমাকে ,
-আমি কাউকে ভুলি না বুঝলি ,
-আচ্ছা দেখা যাবে”
(১৬)
"এরপরের বার আমি মেয়ে হয়ে জন্মাবো । চোখে কাজল ,কপালে টিপ ,বিনি করে বাধা চুল ,নাঃ চুলটা খোলাই থাক ,ওতেই বেশ লাগে বলো ?
আর dslr এ পোস দিয়ে fbতে আর ইন্সট্রা ভরাবো । ছেলেরা দেখেই ক্রাশ খাবে । আর আমি ধরা দিয়েও ধরা দেবো না । তুমি যখন ছেলে হয়ে মেসেজ করবে আমি পাত্তাই দেব না ,ফোন কেটে দেব , অন্য ছেলেদের সাথে ভাব জামাবো ,আর তোমায় জাস্ট ইগনোর ,না না ইগনোর নয় ,ঝুলিয়ে রাখবো ,তুমি বার বার প্রোপজ করবে আমি শুধুই এড়িয়ে যাবো অন্য কোনো গল্পে ,হ্যাঁ না কিছু বলবো না । দেখবে সেদিন কতটা জল ভিজাবে রুমাল ? "
-ভালো
-কি ভালো ?
-বাল
-এই এই আবার ।
-কি আবার ? শুন না কাল কলেজ যাবি ? সাজেশনটা অবশ্যই আনবি কিন্তু ,মনে করে ,দু দিন পর এক্সাম ,আমার কিছুই পড়া হয়নি ।
-আমারও তো ,তুই এত চাপ নিস কেন বলতো ,তোর জন্য শালা আমি একটু শান্তি ঘুমোতে পারি না ,সকালে ফোন ,বিকালে ফোন ,আর পড়া শুনার ,একটু কি রোমান্টিক কথা বলবো ,তা নয় ,
-চুপ কর ত ,আমার ভালো লাগছে না , মাথা ব্যথা করছে ।
-কি হয়েছে ?
-কিছু না ,
-কিছু’ত একটা হয়েছে ,লুকোছিস , আর কত লুকোবি বল ?
-না না কিছু হয়নি বলছি তো ।
-আর মাত্র কয়েটা দিন তারপর হয়তো কোনো দিন দেখাই হবে না , হয়তো ভুলে যাবি ।
-আমি ভুলি না বুঝলি ,তুই ভুলে যাবি ,
-দেখা যাবে ,
হমম দেখা যাবে ,
জানালায় চাঁদ এসে ছুঁয়ে গেছে কখন ঈপ্সিতা বুঝতে পারেনি । এদিকে ভোরের পাখির ডাক ।
নাঃ ! আজ থাক ,কাল বাবাকে আনতে যাবে ,অভিক আসবে বলেছে ।।
আজ তো রান্নাও করেনি ,বিস্কুট ছিল ওটা খেয়েই শুয়ে পড়ল ঈপ্সিতা ।।
(১৭)
দশটা বাজে । কলিং বেল অনেকক্ষন ধরে অভিক বাজাচ্ছিল । অনেক বার ফোন করেছে ,কিন্তু ফোন সুইচ অফ । হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল ঈপ্সিতার । দেখে দশটা বাজে । তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ল । কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলতেই অভিক ,আর বাবা ।।
কি ম্যাডাম ঘুম ভাঙলো । ভেবেছিলাম এক সঙ্গে যাবো আঙ্কেল কে আনতে । হলো না । আপনি ঘুমান ।।
ঈপ্সিতা কি পরে ঘুমিয়েছিল ? নাকি জেগে ছিল জানে না । তবে কাল সারারাত চাঁদ যখন দিগন্তে ছুঁয়ে গিয়েছে ,সূর্য উঠেনি দেখল …
“তারপর আর কথা হয়নি ,নাকি হয়েছিল ? আকাশের নীহারিকা থেকে যেখানে তারার জন্ম ,ঠিক তেমনি ডাইরির বাকি অংশটাও হয়তো লেখা হবে না কোনো দিন ,রহস্যে ভরে থাকবে দু চোখের প্রতীক্ষায় ,কতটা জমি পেল আকাশ ? নাকি জামার হাতায় জল ভিজিয়েছে বুক পকেট ?....চলতে চলতে এক অজানা পাহাড়ের গায়ে লেখা
“ভালোবাসি না তোক একটুও
তবুও করতে পারিনা “না”
বুকের ভেতর গোপন খাতায় তোর ঠিকানা ।।”
এক গাল সাদা দাঁড়ি ,চোখে গোল চশমাওয়ালা লোকটা যে কতটা কঠিন ,বাইরে থেকে দেখলেই বোঝা যায় । তবে ভিতরে ম্যাগমার স্তরে সাজানো । আজও ঈপ্সিতা লক্ষ্য করে ,জানালার কাঁচে কি যেন আঁকি বুঁকি কাটে ,কি যেন খুঁজে চলে ,আনমনে । তবুও সে আকাশে যেন বাঁচা যায় ,বৃষ্টি হয় না ,মেঘ হয় না ।
“মা দেখ একটা জানালা বানালাম ,মন খারাপ হলে ওই জানালার ধারে এসে বসিস ,দেখবি মন ভালো হয়ে যাবে ।।
(সমাপ্ত ,প্রথম অধ্যায়)
(সংক্ষিপ্ত....)